বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ অপরাহ্ন
বছরের শুরুতে ক্যালেন্ডার বা পত্রিকার পাতায় একটা ছবি দেখা যায়। সবুজ ধানখেতের ভেতর দিয়ে লাল ফ্রক পরা এক কিশোরী দৌড়াচ্ছে। ধানখেতের বদলে কখনো পটভূমি কচি সবুজ পাতার চা-বাগান। এই ছবি বারবার ছাপা হয়, তবু তা যেন নতুন। কারণ এই ছবির লাল-সবুজ মানেই বাংলাদেশ। আলাদা করে তা কাউকে বুঝিয়ে দিতে হয় না।
শুধু এই ছবিটা কেন? সবুজ পোশাক পরা মেয়েটির কানে লাল হেডফোন আর হাতে লাল ল্যাপটপ। অনেকের মধ্যে আলাদা করে কী নজর কাড়ে না! লাল-সবুজের সমন্বয় আমাদের টানে সব সময়, মনে করিয়ে দেয়, এ তো বাংলাদেশের রং। তা ঘরের সাজে হোক কিংবা আলোকসজ্জায়। আবার ধরুন, এই পৃষ্ঠার ছবিটা। লাল শাড়ি পরা মেয়েটির হাতে সবুজ ও লাল রঙের একটি ছোট্ট পাখি। কী চমৎকার দৃশ্য!
শুধু লাল শাড়ি পরলে এক রকম লাগে, কিন্তু সঙ্গে যখন সবুজ একটা টিপ বা সবুজ গয়না থাকে—তা যেন আলাদাভাবে চোখে পড়ে। ফ্যাশন হাউস দেশালের ডিজাইনার ইশরাত জাহান যেমন নিজের সাজেও এমন ভাবনা রাখেন, ‘আমি হয়তো একটা সবুজ তাঁতের শাড়ি পরছি, তখন অবশ্যই গয়নার বাক্সে খুঁজতে থাকি লাল কিছু। এই লালের চাহিদা আপনাআপনিই চলে আসে। যা অন্য রঙের ক্ষেত্রে অনেক সময় ধরে ভাবায়।’
লালের সঙ্গে সবুজের এই সমন্বয় হতে পারে নানাভাবে। আমাদের প্রতিদিনকার জীবনযাপনে খেয়ালে-বেখেয়ালে এই দুটি রং এসে পড়ে। কাঁচাবাজারে অনেক সবজি। কিন্তু কাঁচা মরিচের পাশে যদি টসটসে টমেটোর ঝাঁকা থাকে অন্য দিকে চোখটা খুব কমই যায়। লাল প্লাস্টিকের ঝুড়িতে সবুজ সবজি দেখলেও মায়া জন্মাতে পারে। ইশরাত জাহানের সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম তিনি ছিলেন রাস্তায়, নিজের গাড়িতে। ফোনে কথা বলার সময়েই তিনি বলছিলেন, ‘কিছুক্ষণ আগেই রাস্তায় একটা স্কুল ভ্যানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। লাল আর সবুজ রং দিয়ে পুরো ভ্যানের নকশা করা হয়েছে।’
এই দুটি রঙের আবার আলাদা মানেও আছে। চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম জানান, সবুজ রং হচ্ছে প্রাণশক্তি আর তারুণ্যের প্রতীক। প্রকৃতি বোঝাতেও সবুজের বিকল্প নেই। লাল রং আবার ব্যাপক শক্তিশালী। অ্যালার্মিং বোঝাতে বা উৎসবের রং হিসেবেও লাল দারুণ জনপ্রিয়।’ জনপ্রিয় এই চিত্রশিল্পীর ব্যক্তিগত পছন্দ গাঢ় সবুজ রং। তবে সবুজ রঙে ছবি আঁকা বেশ কঠিন বলে মনে করেন তিনি। ক্যানভাসে অনেক রঙের ভেতর একফোঁটা লাল দিলেই নিজের উপস্থিতিতে জ্বলজ্বলে থাকে সে।
সবুজ ঘাসের মধ্যে একটা গাঢ় লাল ক্রিকেট বল—‘ক্লোজ শটে’ এই দৃশ্য দেখা যতটা আনন্দের, তা গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার চেয়ে কম নয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের অন্যতম স্থপতি তানজিম হাসান বললেন, ‘আমাদের পতাকায় যেহেতু এই দুটি রং আছে, তাই যেখানে যেভাবেই এই রং দেখি সবার আগে আমার বাংলাদেশের কথা মনে হয়। আবার সবুজের সঙ্গে লাল রং একটা কনট্রাস্ট (বৈপরীত্য) তৈরি করে, যা মানুষকে আকর্ষণ করে। জীবনের সঙ্গে সবুজের একটা বিশেষ যোগ আছে। আর লালে আছে উন্মাদনা। তাই এই দুটি রং অনেকের কাছেই প্রিয়।’
ঘরে-বাইরে, পোশাকে বা খাবারে যেখানে যেভাবেই এই রং দুটি পাশাপাশি থাকে, তখনই অনেকের মনে একটা বিশেষ দ্যোতনা তৈরি করে। ভিন দেশে সেটা উৎসব বা তারুণ্যের রং হলেও বাংলাদেশে তার আরও অর্থ আছে। মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক যেমন বাক্য দিয়ে পুরোপুরি বোঝানো যায় না, বাংলাদেশের মানুষের কাছে লাল-সবুজের আবেদনও শব্দবন্দী করা যাবে না। সব ভালো লাগার অর্থ খোঁজার দরকার কী? কিছু অনুভব না হয় অব্যক্তই থাক। কারণ লাল-সবুজেই তো আমাদের বসবাস।
Leave a Reply